শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ অনেক দেশেই বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন

সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, “মোদি আমেরিকা হয়ে ঘুরে আসতেই বাংলাদেশে ২৫১ কোটি টাকা অনুদান বন্ধ মাস্কের।”
অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে কেবলমাত্র বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৫১ কোটি টাকার (ভারতীয় রুপি) অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৃতিত্ব দাবি করছে।
উল্লেখ্য যে, দুইদিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আমেরিকায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র কেবলমাত্র বাংলাদেশে অনুদান বন্ধ করেনি বরং, ভারত, নেপাল, কম্বোডিয়া, সার্বিয়াসহ আরো বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে “বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’-এ ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এই অর্থায়ন বাতিলের কথা জানায় ডিওজিই। তাতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের দেওয়া অর্থ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোয় (প্রকল্প) খরচ হতে যাচ্ছিল, যেগুলোর সব কটি বাতিল করা হয়েছে।’ এরপর ধারাবাহিকভাবে ওই প্রকল্পগুলো, প্রকল্প বাস্তবায়নের দেশ ও অঞ্চল এবং অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল) প্রকল্পে অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)।
এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দলগুলো ও ভোটারদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা হয়। এক্সে ডিওজিইর পোস্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালেও বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-সংক্রান্ত প্রকল্পে ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। আর নেপালের একাধিক প্রকল্পে বাতিল করা হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ ছাড়া এ তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালি ও মিসর। এশিয়া মহাদেশ ও আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলকেন্দ্রিক দুটি প্রকল্পেও অর্থ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।”
এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তী অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) এর এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে প্রচারিত পোস্টটি পাওয়া যায়৷ পোস্টটিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের দেওয়া অর্থ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোয় খরচ হচ্ছিল, যেগুলোর সব কটি বাতিল করা হয়েছে। এরপর নানা দেশের নাম, বাতিলকৃত নানা অনুদানের পরিমাণ ও প্রকল্প বা ক্ষেত্রের উল্লেখ করা হয়।
অনুদান বাতিলের এই তালিকায় আছে মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, লাইবেরিয়া, মালি, মিশরসহ বিভিন্ন দেশ। এসব দেশে নানা প্রকল্পে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ অনুদান আগে দেওয়া হতো যা বন্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে দেওয়া অনুদানের পরিমাণ ছিল ২৯ মিলিয়ন ডলার। ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-সংক্রান্ত প্রকল্পে ২১ মিলিয়ন ডলার, নেপালের একাধিক প্রকল্পে ৩৯ মিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পরিমাণ অনুদান বন্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, নিশ্চিতভাবে দেখা যাচ্ছে কেবল বাংলাদেশ নয় বরং ভারত, নেপালসহ আরো নানা দেশে নানা পরিমাণ অনুদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সুতরাং, কেবলমাত্র বাংলাদেশকে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করার বিষয়ে প্রচারিত সংবাদটি বিভ্রান্তিকর।