trufy

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের চিঠিটি সত্য নয়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের চিঠিটি সত্য নয়

বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (২৯ অক্টোবর ১৯৪১ – ২০ আগস্ট ১৯৭১) ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক মহান বীর। দেশের স্বাধীনতার জন্য তার অসাধারণ সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের কারণে তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান “বীরশ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৬১ সালে মতিউর রহমান পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৩ সালে পাইলট অফিসার পদে কমিশন লাভ করেন। এরপর তিনি করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) বিমান ঘাঁটির ২ নম্বর স্কোয়াড্রনে জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত—পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ সালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
মার্চ ১৯৭১—এ ছুটিতে ঢাকায় এসে মতিউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের দৃঢ় সংকল্প করেন। ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন এবং প্রতিরোধ বাহিনী গঠন করেন। করাচিতে ফিরে গিয়ে তিনি একটি যুদ্ধবিমান দখল করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট করাচির মাসরুর বিমান ঘাঁটি থেকে টি—৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে উড্ডয়নের সময় পাকিস্তানি পাইলট রাশেদ মিনহাজের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং তিনি শহীদ হন।

সেই আলোচিত চিঠিঃ

প্রিয়তমা মিলি,
একটা চুম্বন তোমার পাওনা রয়ে গেলো… সকালে প্যারেডে যাবার আগে তোমাকে চুমু খেয়ে বের না হলে আমার দিন ভালো যায় না । আজ তোমাকে চুমু খাওয়া হয় নি। আজকের দিনটা কেমন যাবে জানি না… এই চিঠি যখন তুমি পড়ছো, আমি তখন তোমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে ।  ঠিক কতোটা দূরে আমি জানি না ।  মিলি, তোমার কি আমাদের বাসর রাতের কথা মনে আছে? কিছুই বুঝে উঠার আগে বিয়েটা হয়ে গেলো ।  বাসর রাতে তুমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে যখন কাঁদছিলে,আমি তখন তোমার হাতে একটা কাঠের বাক্স ধরিয়ে দিলাম ।
তুমি বাক্সটা খুললে… সাথে সাথে বাক্স থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকী বের হয়ে সারা ঘরময় ছড়িয়ে গেলো । মনে হচ্ছিলো আমাদের ঘরটা একটা
আকাশ… আর জোনাকীরা তারার ফুল ফুটিয়েছে! কান্না থামিয়ে তুমি
অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে,”আপনি এতো পাগল কেনো!?”
মিলি,আমি আসলেই পাগল…নইলে তোমাদের এভাবে রেখে যেতে
পারতাম না ।  মিলি, আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিন প্রিয় কন্যা
মাহিনের জন্মের দিনটা ।  তুমি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলে ।  বাইয়ে আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি… আমি বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কষ্টে পুড়ে যাচ্ছি । অনেকক্ষণ পরে প্রিয় কন্যার আরাধ্য কান্নার শব্দ… আমার হাতের মুঠোয় প্রিয় কন্যার হাত! এরপর আমাদের সংসারে এলো আরেকটি ছোট্ট পরী তুহিন…. মিলি, তুমি কি জানো…আমি যখন আমার প্রিয় কলিজার টুকরো দুই কন্যাকে এক সাথে দোলনায় দোল খেতে দেখি, আমার সমস্ত কষ্ট — সমস্তযন্ত্রণা উবে যায় ।  তুমি কি কখনো খেয়াল করেছো, আমার কন্যাদের শরীরে আমার শরীরের সূক্ষ একটা ঘ্রাণ পাওয়া যায়?মিলি… আমাকে ক্ষমা করে দিও । আমার কন্যারা যদি কখনো জিজ্ঞেস করে,”বাবা কেনো আমাদের ফেলে চলে গেছে?” তুমি তাঁদের বলবে, “তোমাদের বাবা তোমাদের অন্য এক মা’র টানে চলে গেছে…যে মা’কে তোমরা কখনো দেখো নি।সে মা’র নাম ‘বাংলাদেশ’ ।  মিলি…আমি দেশের ডাককে উপেক্ষা করতে পারি নি । আমি দেশের জন্যে ছুটে না গেলে আমার মানব জন্মের নামে সত্যিই কলঙ্ক হবে ।  আমি তোমাদের যেমন ভালোবাসি,তেমনি ভালোবাসি আমাকে জন্ম দেওয়া দেশটাকে ।  যে দেশের প্রতিটা ধূলোকণা আমার চেনা । আমি জানি… সে দেশের নদীর স্রোত কেমন… একটি পুটি মাছের হৃৎপিন্ড কতটা লাল, ধানক্ষেতে বাতাস কিভাবে দোল খেয়ে যায়….! এই দেশটাকে হানাদারের গিলে
খাবে,এটা আমি কি করে মেনে নিই? আমার মায়ের আচল শত্রুরা ছিড়ে
নেবেৃ এটা আমি সহ্য করি কিভাবে মিলি?

আমি আবার ফিরবো মিলি… আমাদের স্বাধীনদেশের পতাকা বুক পকেটে নিয়ে ফিরবো ।  আমি, তুমি, মাহিন ও তুহিন… বিজয়ের দিনে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়াবো সবাই । তোমাদের ছেড়ে যেতে বুকের বামপাশে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে… আমার মানিব্যাগে আমাদের পরিবারের
ছবিটা উজ্জ্বল আছেৃ বেশি কষ্ট হলে খুলে দেখবো বারবার ভালো থেকো মিলি… ফের দেখা হবে ।

আমার দুই নয়ণের মণিকে অনেক অনেক আদর ।

ইতি,
মতিউর
২০ আগস্ট, রোজ শুক্রবার, ১৯৭১

ফ্যাক্টচেকঃ
এই ব্যাপারে সাংবাদিক মানস ঘোষের করা ২০১৪ সালের ১১ জুন একটি ফেসবুক পোষ্ট করেন । তিনি মিলি রহমানের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার  নেন । এই ব্যাপারে তিনি বলেন , “মিলি রহমান জানালেন চিঠিটি মতিউর এর না। এটা একটা ভুয়া চিঠি। গত ২—৩ বছর ধরে তিনি এটা ফেইসবুকে দেখছেন, কিন্তু থামাতে পারছেন। মিলি রহমান চান এই মিথ্যে চিঠিটা ফেইসবুক থেকে মুছে যাক।”

পাশাপাশি, ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন সংগ্রহশালা একাত্তরের (বশধঃঃড়ৎ) থেকে মিলি রহমানের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় সেখানেও এই বিষয়টি নিয়ে মিলি রহমান বলেন, “চিঠিটা সম্পূর্ণ ভুয়া। আমি তার স্ত্রী মিলি রহমান। আমি জানি চিঠিটা কতখানি অসত্য।”

উল্লেখিত, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের নাম উল্লেখ করে এই চিঠি গত প্রায় ২০১৩ সাল থেকেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হচ্ছে । আমাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই চিঠিটি ফেসবুকে প্রথম পোস্ট করেন ‘অৎরভ গড়ুহঁফফরহ’ নামের এক ব্যক্তি । পরে আবার সে ব্যক্তি নিজেই তার সেই পোস্টের কমেন্টে জানান , “চিঠিটি রূপক। কাল্পনিক অর্থে লেখা। কেউ বিভ্রান্ত না হবার অনুরোধ রইলো।”

তথ্যসূত্রঃ
মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমানের সাক্ষাৎকার
মানস ঘোষ (সাংবাদিক)

Bd News24bd

ekattor.org

Join Us as a Volunteer!

Are you passionate about promoting truth and making a difference? At Trufy.co, we’re building a community to fight misinformation and create a more informed society. By joining us, you’ll contribute to meaningful change, learn valuable skills, and be part of a supportive team dedicated to making the world a better place. Sign up today and help us spread the truth!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *