অফিসকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। লিন্ডা জানান যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের জুলাই মাসে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং শেখ হাসিনার চুরি করা বা চাঁদাবাজির কিছু অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে বা তার মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ও যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার করেছেন। নথিতে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ৩০০,০০০,০০০ ডলারের বেশি চুরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তদন্তের জন্য এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসকে অনুরোধ করার তথ্য উল্লেখ রয়েছে এই নথিতে। এর প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ০৪ জানুয়ারি ডেবরা লাপ্রেভোট্টের সাথে ডিওজে এর একটি মিটিং নির্ধারিত রয়েছে বলেও জানানো হয় নথিতে।
এই নথি পড়ে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, এটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো নথি নয়৷ বিশেষ করে, এই নথিতে থাকা অন্তত দুইটি তথ্য এই সন্দেহের পক্ষেই যায়। যেমন, নথিতে শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, এও উল্লেখ আছে যে ২০০৭ সালের জুলাইয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়৷ আমরা যাচাই করে দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তি পান। অন্যদিকে, নথিতে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত একটি মিটিংয়ের বিষয়েও বলা হয়েছে। এই বিষয়গুলো থেকে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, নথিটি ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে প্রস্তুত করা হয়েছিল।
নথিতে দুইজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ আছে, ডেবরা লাপ্রেভোট্টে এবং মার্কিন বিচার বিভাগের (ডিওজে) সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, লিন্ডা স্যামুয়েলস ২০১৩ সালে মারা গেছেন। অন্যদিকে, ডেবরা লাপ্রেভোট্টে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এফবিআইয়ের সুপারভাইসরি স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের পক্ষ থেকে ডেবরা লাপ্রেভোট্টের সাথে কথা বলেছি আমরা। তার কাছে এই নথির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের কাছে মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে) কর্তৃক ২০০৯ সালের ০৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। এই বিজ্ঞপ্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কয়েকটি ব্যাংক হিসাবের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়। এই ব্যাংক হিসাবগুলোতে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা ছিল। এ বিষয়ে হওয়া মামলার নাম্বার 1:09-cv-00021(JDB)।

ডেবরা রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটকে বলেছেন, জয় এবং শেখ হাসিনার নামে থাকা নথিতে যে অভিযোগ উল্লেখ আছে তার বিপরীতে কোনো তথ্যপ্রমাণ তারা সেসময় পাননি। জয় ২০১৬ সালে এক ফেসবুক পোস্টেও একই তথ্য জানান। ডেবরা আমাদের বলেছেন, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে আরাফাত রহমান কোকোর নামে প্রায় একই ধরণের অর্থ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে তদন্ত করে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।
অর্থাৎ, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ হাসিনার বিষয়ে প্রচারিত নথিটি কোনো মামলার নথি নয়, এটি শুধুমাত্র একটি অভিযোগ পত্র ছিল। সাড়ে ১৬ বছরের পুরোনো এই কাগজকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে জয়ের গ্রেফতার হওয়ার দাবির সাথে জড়িয়ে প্রচার করা হয়েছে।
সম্পাদিত ছবি দিয়ে দর্শক আকর্ষণের চেষ্টা
গহীনের বার্তা চ্যানেলটিতে জয়ের গ্রেফতারের দাবিতে প্রচার হওয়া ভিডিওগুলোর থাম্বনেইলে ‘জয়কে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে’ এমন দৃশ্যের চারটি ছবি দেখতে পেয়েছি আমরা। চারটি ছবিই রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গেছে, মূল ছবিগুলোতে জয়ের উপস্থিতি নেই। এগুলো বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময়ে আটকের ছবি। এসব ছবিতে আটক ব্যক্তির মুখমণ্ডলের স্থলে জয়ের মুখমণ্ডল বসিয়ে সম্পাদনা করা হয়েছে।
One Response
Good